জাতীয় সাপ্তাহিক ক্রাইম ডায়রি একটি অপরাধ বিষয়ক পত্রিকা।।

national weeklycrime diary

national weeklycrime diary
ক্রাইম ডায়রি(জাতীয় সাপ্তাহিক, অনলাইনদৈনিক, অনলাইন টেলিভিশন ও অপরাধ গবেষণা )

বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৫

 বীর আব্দুল জলিল একজন সত্যিকারের মহৎ মানুষঃ

একজন সৎ ও দক্ষ পুলিশ কমিশনার


মোঃওমর ফারুক রবিন,ক্রাইম ডায়রি,২৭/৮/১৫ইং,ঢাকাঃ

একাত্তরের রণাঙ্গণে লড়াই করেছিলেন অসীম সাহসী কিশোর আব্দুল জলিল মন্ডল। ১৯৮৮ সালে যোগ দেন পুলিশ বিভাগে। ‘পুলিশ জনগণের বন্ধু’, কাজ করতে গিয়ে বারবার এর প্রমাণ দিয়েছেন আব্দুল জলিল মন্ডল। সাধারণ প্রথা ভাঙার জন্য আলোচিত আব্দুল জলিল মন্ডল ২০১৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার হিসেবে যোগ দেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর ভূমিকার পাশাপাশি নগরীর এখানে সেখানে আবর্জনা অপসারণে ঝাড়ু হাতে নেমে পড়ে নগরবাসীকে চমকে দিয়েছেন বার বার। পুলিশের চিরন্তন রীতি থেকে বেরিয়ে মন্ডল
কখনও রাস্তায় নেমে গর্ত ভরাট করছেন, কখনও গণপরিবহনের সংকট মেটাতে পুলিশের যানবাহন নিয়ে যাচ্ছেন নগরবাসীর কাছে। সিএমপি কমিশনারের এই সেবাধর্মী কর্মযজ্ঞে খুশি সাধারণ মানুষ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তাকে নিয়ে আলোচনা চলে। পাবনার ছেলে মন্ডলের পুলিশ সার্ভিসে যোগদানের স্মৃতিচারণ দিয়েই
আলোচনার শুরু। মন্ডল ‍জানালেন, পুলিশ হবেন এমন কোন স্বপ্ন তিনি দেখেননি। তবে মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রশিক্ষণ নেওয়ার ‍সুবাদে নিজের অজান্তেই এমন একটি চিন্তা তার মনে ঠাঁই পায়, যে কারণে যুদ্ধের পর সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় প্রথম পছন্দ হিসেবে তিনি পুলিশ বিভাগকেই বেছে নিয়েছিলেন। ‘পুলিশে চাকরি হওয়ার আগ পর্যন্ত আমি কোনদিন লোকাল থানায়ও যাইনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় দু’য়েকবার
পুলিশের কাছে যেতে হয়েছিল। তবে মুক্তিযুদ্ধের সময় তো আমি হাফ পুলিশ ছিলাম,’
বললেন জলিল মন্ডল। ‘মুক্তিযুদ্ধের পর আমাদের পাবনা জেলা শহরে এনে ক্যাম্পে রাখা হলো। প্রশিক্ষণ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কাউকে সেনাবাহিনীতে, কাউকে নৌবাহিনীতে, ‍কাউকে পুলিশে নেয়ার কথা ছিল। আমি পুলিশের জন্য সিলেক্টেডও
হলাম। কিন্তু বাবা-মা বললেন, পড়ালেখা কর। তখনই আর আমার পুলিশে যাওয়া হলো না। আমি পড়ালেখা করলাম। তবে ট্রেনিং যেহেতু ছিল, গোলাবারুদের গন্ধ ভাল লাগত, সুপ্ত একটা আকর্ষণ তখন থেকেই ছিল। অগোচরে সেটারই বাস্তবায়ন হয়ে গেছে। ’ বললেন মন্ডল। মন্ডল জানালেন, ছোটবেলা থেকেই সাহসটা
তার একটু বেশি। পুলিশে এসে তার ব্যতিক্রম হয়নি। প্রথম পোস্টিং পার্বত্য জেলা
খাগড়াছড়িতে, ব্যাটালিয়নে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে। খাগড়াছড়ি তখন অশান্ত। তিনি বলেন, ‘খাগড়াছড়িতে সহকর্মীরা সবাই খালি আতঙ্কে থাকত। সবাই বলত, এই গুলি আসবে, গুলি আসবে। আমি জানতাম গুলি ছোট একটা জিনিস। এটা মাথায়-বুকে লাগলে মরব, আর কোথাও লাগলে মরব না। সুতরাং আমি অতটা ভয় করতাম না। যখন কোথাও মুভ করতাম, সবাই গাড়ির জানালা বন্ধ করে দিত। আমি বলতাম কেন-জানালা বন্ধ করবো কেন?’ পুলিশ মানেই চোর-ছিনতাইকারীর পেছনে দৌঁড়ানো, অপরাধ দমন, মানুষ পেটানো-- প্রথাগত এই ধারণা থেকে শুরুতেই বেরিয়ে আসার পথ খুঁজতে লাগলেন মন্ডল। পুলিশেরও তো কিছু সামাজিক দায় রয়েছে,আছে দায়িত্ববোধও। সেটাকেই সম্বল করলেন তিনি। ‘নীলফামারীর এসপি যখন ছিলাম, সেখানে থানায় নারী নির্যাতনের মামলা বেশি হত। গরীব লোকজন, ছেঁড়া লুঙ্গি, ছেঁড়া শাড়ি পরে আমার কাছে আসতেন। ১৯৯৮ সালের দিকে নীলফামারিতে মাত্র একশ’ টাকায় ভাল ভারতীয় শাড়ি পাওয়া যেত, ৬০-৭০ টাকায়
লুঙ্গি পাওয়া যেত। আমার কাছে সবসময় একশ’টা করে শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা মজুদ থাকত। গরীব লোকজন এলে তাদের দিতাম।’ - মানবসেবার একটি উদাহরণ ক্রাইম ডায়রির  সামনে তুলে ধরেন মন্ডল। মন্ডল বলেন, ‘আমি আগে মানুষ, তারপর আমি
পুলিশ, তারপর আমি অফিসার। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, তিনিও তো প্রথমে মানুষ, তারপর প্রেসিডেন্ট। রাস্তার ভিখারিকে যেমন জবাবদিহি করতে হবে, আমি পুলিশ, আমাকেও করতে হবে। সুতরাং মানুষ হিসেবে
আমার দায়িত্ব তো আমাকে পালন করে যেতেই হবে। ’ মানবিক এবং সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকেই চট্টগ্রাম নগরীতে আবর্জনা অপসারণ, সড়কের
গর্ত ভরাট, সাধারণ মানুষের জন্য গণপরিবহনের ব্যবস্থা করার মত কাজগুলো
করেছেন বলে জানালেন মন্ডল। সিএমপিতে যোগদানের পর নিজেই ঝাড়ু হাতে
রাস্তায় নেমেছিলেন, থানায় থানায় সভা করে সাধারণ মানুষকে নগরী পরিচ্ছন্ন রাখার
ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। এরপর মাঝে হঠাৎ সিএমপি কমিশনারের এই কর্মযজ্ঞ
কিছুটা থেমে থাকে। সম্প্রতি গর্ত ভরাটের কাজে নেমে আবারও মানুষের মুখে মুখে তাকে নিয়ে ‍আলোচনা। হঠাৎ আবর্জনা অপসারণের কাজ বন্ধ করে দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাকে তো বলা হয়েছে, এই কাজটা আমার না। দুই-একজন
মন্ত্রী বলেছেন, এ কাজটা আমার না। কিন্তু আমি মনে করেছি-কে কি বলল সেটা বড় কথা না। কাজটা আমার না, কিন্তু যখন কাজটাতে হাত দিয়েছি তখন তো আমি দশজন মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছি, সচেতন করতে পেরেছি। ‘আমার কাজ শুধু চুরি-ডাকাতি বন্ধ করা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, ঠিক আছে। কিন্তু বিবেকবান মানুষ হিসেবে আরেকটা মানুষকে সচেতন করাও তো আমার কাজ।’ ‘আমাদের ডিপার্টমেন্ট থেকেও বলা হয়েছে এটা তো তোমার কাজ না। কিন্তু কেউ যত্রতত্র ময়লা ফেলছে, তার বিরুদ্ধে মামলা করার, পানিশমেন্ট দেয়ার ক্ষমতা তো পুলিশকে দেওয়া আছে। সেই দায়িত্ব তো আমি এভয়েড করতে পারবনা,’ বলেন মন্ডল। ভবিষ্যতে পরিচ্ছন্নতার কাজ অব্যাহত রাখবেন কিনা, জানতে চাইলে সিএমপি কমিশনার
বলেন, আমাকে বলা হচ্ছে এটা তোমার কাজ না, তুমি করছ কেন? ভবিষ্যতে হিসাব করে করব, কেউ যেন আমার শত্রু কিংবা প্রতিপক্ষ হয়ে না যান। ‘মেয়র সাহেব (আ জ ম নাছির উদ্দিন) একটা ভিশন দিয়েছেন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি মানুষকে সচেতন করবেন। তারপর জানুয়ারি থেকে ফাইনাল পানিশমেন্ট (শাস্তি) দেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। মেয়র সকালে বের হন, রাত পর্যন্ত সচেতন করার কাজ করেন। কাজটা আমরাই শুরু করেছিলাম। তিনি (মেয়র) বলছেন, এটা সিটি করপোরেশনের কাজ, তার দায়িত্ব। সুতরাং সেটা তিনি করছেন। কাজটা কিন্তু
থেমে নেই। মেয়রকে আমরা সহায়তা করব, ইনশল্লাহ। ’
‘জানুয়ারি থেকে পানিশমেন্ট দেবেন মেয়র, তখন পুলিশের প্রয়োজন হবে। আমরা মেয়রকে সার্বিক সহযোগিতা দেব,’ বলেন মন্ডল। সম্প্রতি গর্ত ভরাটের কাজে নামার বিষয়ে মন্ডল বলেন, রাস্তায় বড় বড় গর্ত। ইপিজেডের সামনে একটা গর্তে আমরা দেড় হাজার ইট দিয়েছি। ওই গর্তে গাড়ি পড়লে ব্রেক ধরতে হয়। গাড়ির গতি স্লো হয়ে যায়। দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ মাঠে থাকে। তাদের সবার আগে বিষয়গুলো চোখে পড়ে। এটা দেখে তো আমরা বসে থাকতে পারি না। ‘গর্ত ভরাট করার পর আমি মেয়র সাহেবকে ফোন দিয়েছিলাম। উনি বলেছেন, আপনি করবেনই তো। সবার করা উচিৎ। আপনাকে দেখে সবাই করবে। ’ বলেন পুলিশ কমিশনার।
‘এটা করতে গিয়ে আমাকে যে খুব বেশি টাকাপয়সা খরচ করতে হয়ে তা নয়। পদ্মা
অয়েলকে বলেছি পাঁচ হাজার ইট দিতে। বন্দরকে বলেছি, শ্রমিক দিতে। এতে কাজ
হয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো টাকা দিয়েছে। ভাল কাজে সবাই এগিয়ে আসে। আর
লাখ দু’য়েক টাকা খরচ করার মত তহবিল তো সিএমপি’র নিজেরও রয়েছে। ’
‘রমজানে দেখি গণপরিবহনের সংকট। ইফতারের সময় মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে
হচ্ছে। আমি পুলিশের বাস দিয়ে তাদের বাড়ি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করলাম। টাকাপয়সা বিষয় না, আসল কথা হচ্ছে সদিচ্ছা,’ বলেন সিএমপি কমিশনার। সামাজিক কাজগুলো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে, সরকারি বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করা উচিৎ বলে মনে করেন আব্দুল জলিল মন্ডল। তিনি বলেন, আমরা যখন ঝাড়ু হাতে চট্টগ্রামে নামলাম, তার দুইদিন পর গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন সাহেব ঢাকায় শুরু করলেন। তারপর তো সারা দেশে শুরু হয়ে গেল। এতে তো বুঝতে পারছেন, মানুষ এটাকে গ্রহণ করেছে। এভাবে সব প্রতিষ্ঠানের এগিয়ে আসা দরকার। ‘সরকারি চাকরি মানেই হচ্ছে সার্ভিস দেয়া, মানুষের সেবা করা। কিন্তু এখন অবস্থা এমন
হয়েছে যে, সরকারি চাকরিজীবী মানে অনেক ক্ষমতাবান ব্যক্তি। ফাইলপত্র আসবে, আটকে রাখব, মানুষকে হয়রানি করব। ’ পুলিশ হব, টাকা কামাব-এমন চিন্তা থেকে এ
পেশায় আসেননি জানিয়ে মন্ডল বলেন, সততার জন্য চট্টগ্রামের সর্বমহলে এর প্রশংসা আছে। সামাজিক কাজ কোনভাবে নগরীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মোটেই না, একেবারেই না। এতে আমাদের অফিসাররা, সদস্যরা আরও উৎসাহিত হচ্ছেন। মানুষ পুলিশকে ভাল বলছে, এতে তারা অনুপ্রেরণা পাচ্ছে, আরেকটা ভাল কাজে উৎসাহিত হচ্ছে। আর খারাপ কাজের দিকে যাচ্ছে না। নেতিবাচক মন্তব্যে হতাশা আসে কি না জানতে চাইলে সিএমপি কমিশনার বলেন, হতাশা মাঝে মাঝে ধাক্কা দেয়, তবে প্রবল কিছু না। আমি মুক্তিযোদ্ধা। অল্প বয়সেই দেশ মাতৃকার টানে যুদ্ধে গিয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধ তো আরেকবার আসবে না। আমার তো আর চাওয়া- পাওয়ার কিছু নেই। ‘যখন দেখি ফেসবুকে আমার কাজের ছবিতে ৭০ হাজার, ৭৫ হাজার লাইক পড়েছে, তখন হতাশা
আর থাকে না। আমার চাকরির জন্য হয়ত ফেসবুকের লাইক খুব ইতিবাচক কিছু না। তবে এই যে ৭০-৭৫ হাজার, এক লক্ষ লোক ছবিতে লাইক দেন, এটা তো তারা আমার কাজকে ভালবেসেই দিচ্ছেন। অতীতে অনেকে কমিশনার ছিলেন, ভবিষ্যতে অনেকে আসবেন, এই ভালবাসা তো সবাই পায়নি, পাবেও না। ’মুখে পরিতৃপ্তির হাসি মন্ডলের।
https://www.facebook.com/pages/National-weeklycrime-diary/639786429398358?ref=hl

কোন মন্তব্য নেই: