জাতীয় সাপ্তাহিক ক্রাইম ডায়রি একটি অপরাধ বিষয়ক পত্রিকা।।

national weeklycrime diary

national weeklycrime diary
ক্রাইম ডায়রি(জাতীয় সাপ্তাহিক, অনলাইনদৈনিক, অনলাইন টেলিভিশন ও অপরাধ গবেষণা )

রবিবার, ১৪ জুন, ২০১৫



দাদাকে ঐতিহাসিক লাল গালিচা সংবর্ধনা
বাংলাদেশ-ভারত ২২টি চুক্তি সমঝোতা ও প্রটোকল স্বাক্ষরিত
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে -নরেন্দ্র মোদি
ক্রাইম ডায়রি ডেস্ক রিপোর্ট,ক্রাইম ডায়রি ঢাকা,আপডেট ৬.৬.১৫ ৩পি এমঃ
বাংলাদেশে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর আগমন আওয়ামীলীগ সরকারের একটি বড় অর্জন। এশিয়ার বৃহৎশক্তিশালী দেশের প্রধানমন্ত্রীর আগমন বাংলাদেশীদের গর্বিত করেছে। শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকের পর বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দু’দেশের মধ্যে ২২টি চুক্তি, সমঝোতা ও প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর তেজগাঁওস্থ কার্যালয়ে এসব চুক্তি স্বাক্ষর করেন উভয় দেশের কর্মকর্তারা। এ সময় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও উপস্থিত ছিলেন। এর আগে ঐতিহাসিক স্থলসীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত চুক্তির অনুসমর্থনের দলিল বিনিময় হয়। এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্বাক্ষরের পর যৌথ বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কানেক্টিভিটি শুধু দুই দেশের নয় এই অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার আশ্বাস প্রদান করেন। দু’দিনের সফরে নরেন্দ্র মোদি গতকাল শনিবার ঢাকায় এসেছেন।
দুইদেশের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দু’দেশের মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ের দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকের পর স্বাক্ষরিত চুক্তি, প্রটোকল ও সমঝোতা স্মারকের মধ্যে রয়েছে- দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি, অভ্যন্তরীণ নৌ প্রটোকল, উপকূলীয় নৌ চলাচল চুক্তি, পণ্যের মান স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন সংক্রান্ত সহযোগিতা চুক্তি এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় সহযোগিতা চুক্তি। এছাড়াও উভয় দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বাহিনীর (কোস্টগার্ড) মধ্যে সহযোগিতা, মানবপাচার প্রতিরোধ, জাল নোট পাচার প্রতিরোধ, সমুদ্রভিত্তিক ব্লুু-ইকোনমির ক্ষেত্রে সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক, ২০০ কোটি ডলারের ঋণ বিষয়ক সমঝোতা, বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরে সামুদ্রিক অর্থনীতির সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার বিষয়ক সমঝোতা, আখাউড়ায় ইন্টারনেটের আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইথ লিজ বিষয়ে বিএসএনএল ও বিএসসিসিএলের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি, বাংলাদেশে লাইফ ইনস্যুরেন্স করপোরেশনের (এলআইসি) কার্যক্রম শুরু নিয়ে সম্মতিপত্র। ভেড়ামারা ও মংলায় ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ অঞ্চল প্রতিষ্ঠাবিষয়ক সমঝোতা চুক্তিও সই হয়।
এছাড়াদুই নেতার উপস্থিতিতে কয়েকটি কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কলকাতা-আগরতলা বাস সার্ভিস ও ঢাকা-শিলং-গুয়াহাটি বাস সার্ভিস। এছাড়া খুলনা-মংলা রেলওয়ে লাইন এবং কুলাউড়া-শাহাবাজপুর রেল সংযোগ পুনর্বহাল, শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে রবীন্দ্র ভবন, সারদা পুলিশ একাডেমিতে একটি মৈত্রী ভবন, ফেনী নদীর ওপর সেতু নির্মাণ প্রকল্প, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন-এর একটি পরীক্ষাগার এবং একটি বর্ডার হাট উদ্বোধন করা হয়।
দুই প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ : এসব স্বাক্ষরের পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দেয়া ভাষণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বিদ্যমান বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে তার সরকারের তরফ থেকে সব রকম পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে ঢাকাকে আশ্বাস দিয়েছেন। বাংলাদেশের ইপিজেডে ভারতের বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের মাধ্যমে এই ঘাটতি কমবে বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক সামনের দিনগুলোতে আরো দৃঢ় হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ সময় তিনি দু’দেশের মধ্যকার সাংস্কৃতিক নৈকট্য ও ক্রিকেট নিয়ে উভয় দেশের মানুষের আগ্রহের কথা উল্লেখ করেন। বর্তমানে যে পাঁচশ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারত থেকে বাংলাদেশে আসছে আগামী দু’বছরের মধ্যে তা বাড়বে বলে তিনি তার বক্তব্যে জানিয়েছেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বি-পক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘ভারত আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। আমি মনে করি, কানেক্টিভিটি শুধু দুই দেশের নয়, এই অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শিমুল মিলনায়তনে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী তাদের বক্তব্য রাখেন। ভারতের প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, ভারত গত কয়েক বছরে অর্থনৈতিকভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিও সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। গত ছয় বছর ধরে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার প্রায় সবগুলো অর্জন করতে পেরেছি। ভারতও আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশ। আমরা পরস্পর উন্নয়ন সহযোগী। আজকে এই অপরাহ্নে খুবই ফলপ্রসূ ও দ্বি-পক্ষীয় আলোচনা হয়েছে। আমাদের আলোচনা ছিল অত্যন্ত গঠনমূলক। আমরা পরস্পরের উদ্বেগ ও অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে অবগত রয়েছি। দ্বি-পক্ষীয় সব নিয়ে আমাদের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং আমি উভয়ই এ বিষয়ে সম্মত হয়েছি যে, কানেক্টিভিটি শুধু দুই দেশের নয় এই অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি বলেন, উপকূলীয় নৌচলাচল চুক্তি, বাণিজ্য চুক্তি নবায়ন, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন প্রটোকলে স্বাক্ষর এবং এর সঙ্গে সঙ্গে নতুন বাস সার্ভিসগুলোর উদ্বোধন এ অঞ্চলের সংযোগ প্রতিষ্ঠার প্রতি আমাদের অঙ্গীকারের দৃষ্টান্ত।
মোদি-মমতা বৈঠক : দুই দিনের বাংলাদেশ সফরের প্রথম দিনে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশটির পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতার সাথে বৈঠক করলেন ঢাকায়। গতকাল শনিবার এ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিভিন্ন চুক্তি ও প্রটোকল সইয়ের পূর্বে তাদের এ বৈঠক নিয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তবে ভারতীয় এই দুই নেতার মধ্যে কি আলোচনা হয়েছে সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
নরেন্দ্র দামোরদাস মোদির ঢাকা সফরের একদিন আগেই গত শুক্রবার রাতে ঢাকায় পৌঁছেন মমতা। গতকাল শনিবার রাতেই মমতা আবার কলকাতা ফিরে যান। সর্বশেষ ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর সঙ্গে ঢাকায় আসার কথা ছিল মমতার। কিন্তু শেষ মুহূর্তে মমতা ঢাকা আসতে রাজি হয়নি। ফলে আলোচিত তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তিটি আলোর মুখ দেখতে পায়নি।
বিমান বন্দরে লাল গালিচা সংবর্ধনা : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে গতকাল সকালে দু’দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ৮১ জন সফরসঙ্গীসহ এখানে পৌঁছার পর তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। ২০১৪ সালের ২৬ মে ভারতের ১৫তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের পর এটি বাংলাদেশে মোদির প্রথম সফর। ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি জেট বিমান ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও তার সফর সঙ্গীদের নিয়ে সকাল ১০টা ৮ মিনিটে ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবতরণ করে। নরেন্দ্র মোদি ১০টা ২৫ মিনিটে ভারতীয় বিমান বাহিনীর জেট (কে-৫০১২) রাজদূত থেকে নেমে আসার পর ১৯ বার তোপধ্বনি করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমান বন্দরে ভিভিআইপি টারমাকের কাছে নরেন্দ্র মোদিকে স্বাগত জানান। এ সময় একটি ছোট শিশু তাকে ফুলের তোড়া উপহার দেয়। এর পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বিমান বন্দরের ভিভিআইপি টারমাকের কাছে স্থাপন করা অস্থায়ী সালাম গ্রহণ মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয়। বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর একটি চৌকস দল নরেন্দ্র মোদিকে গার্ড অব অনার প্রদান করে এবং তিনি সালাম গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তিনি সুসজ্জিত মঞ্চ থেকে সালাম গ্রহণ করেন। এ সময় দু’দেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়। পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী গার্ড পরিদর্শন করেন।
এরপর, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে উপস্থিত মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবর্গ এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে পরিচয় করিয়ে দেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীও এ সময় তার সফরসঙ্গীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পরিচয় করিয়ে দেন।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর গণমাধ্যম উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদিকে স্বাগত জানাতে বিমান বন্দরে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া কেবিনেট সচিব মোশাররফ হোসাইন ভূঁইয়া, প্রধানমন্ত্রী মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, কূটনৈতিক কোরের ডিন, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার, ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এবং উচ্চ পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
স্মৃতি সৌধে মোদি : বিমান বন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যান। সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান মোদি।
ক্রিম রঙের কোর্তা, চুড়িদার পায়জামা ও ছাই রঙের নেহেরু জ্যাকেট পরিহিত সৌম্য-দর্শন ভারতের প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকাল ১১টা ২০ মিনিটে জাতীয় স্মৃতিসৌধে এসে পৌঁছান। এখানে তাকে স্বাগত জানান গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকসহ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা ।
বেলা সাড়ে ১১টায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিসৌধের মূল বেদীতে বাংলাদেশের জন্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগকারী শহীদদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানান। পুষ্পমাল্য অর্পণের পর শহীদদের স্মরণে কিছু সময় তিনি নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় তিন বাহিনীর সুসজ্জিত একটি দল ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানায়। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বাজতে থাকে।
পরে নরেন্দ্র মোদি পরিদর্শন বইতে স্বাক্ষর করেন। তিনি লেখেন, মাতৃভূমির জন্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগকারী পুরুষ, নারী ও শিশুদের আমি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। তিনি সেখানে উদয়পদ্ম গাছের চারা রোপণ করেন ।
বঙ্গবন্ধু স্মৃতি যাদুঘরে মোদি : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাজধানীর ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শনকালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। বেলা ১২টা পাঁচ মিনিটে তিনি ধানমন্ডিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে পৌঁছেন এবং জাদুঘর পরিদর্শনকালে পুষ্পতোড়া প্রদান করে জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী এখানে এসে পৌঁছলে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র এবং কন্যা শেখ রেহানার পুত্র রেদোয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, তার স্ত্রী পেপ্পি সিদ্দিক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি ট্রাস্ট’এর সদস্য সচিব শেখ হাফিজুর রহমান, সদস্য শাহনাজ ইয়াসমিন শম্পা, প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী মাসুরা হোসেন প্রমুখ তাকে স্বাগত জানান।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ২৭ মিনিট বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে অবস্থান করেন। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুস্পার্ঘ্য অর্পণ করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এ সময় নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। পরে মোদি জাদুঘরের বিভিন্ন কক্ষ ঘুরে দেখেন এবং পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা-পূর্বে বাড়ির যে বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিতেন সেখানেও কিছুক্ষণ অবস্থান করেন। মোদি হোটেল সোনারগাঁওয়ে অবস্থান করবেন। জাদুঘর থেকে ফিরে আসার পর বিকেলে তার হোটেল কক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী সাক্ষাৎ করেন।
বাংলায় টুইট করেন হাসিনাকে মোদি : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকায় পৌঁছে বাংলায় টুইট করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান। মোদী দ্বিতীয় টুইট করে বলেন ‘বাংলাদেশ, আমি আমার সাথে ভারতের মানুষের ভালবাসা এবং শুভেচ্ছা নিয়ে এসেছি।’
মোদিকে বহনকারী ভারতীয় বিমানবাহিনীর বিশেষ ফ্লাইট ‘রাজদূত’ গতকাল শনিবার সকাল ১০টা ৮ মিনিটে ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবতরণ করে। বিমান বন্দরের এসব আনুষ্ঠানিকতার মাঝেই বাংলায় একটি টুইট করেন নরেন্দ্র মোদি। এতে তিনি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ, আমি আমার সাথে ভারতের মানুষের ভালবাসা এবং শুভেচ্ছা নিয়ে এসেছি।’
পরপরই একই বিষয়ে ইংরেজিতে টুইট করেন মোদি। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাংলায় দ্বিতীয় টুইট করেন মোদি। এতে তিনি লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, উষ্ণ অভ্যর্থনার জন্য ধন্যবাদ। আমি একটি সুন্দর সফর আশা করছি, যা ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ককে সুদৃঢ় করবে।’
বিনিময় হল সীমান্ত দলিল : ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সীমান্ত বিনিময় সংক্রান্ত চুক্তির অনুসমর্থন দলিল বিনিময় হয়েছে। বিকেলে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে এ দলিল বিনিময় হয়। গতকাল শনিবার এ চুক্তির অনুসমর্থন দলিল বিনিময় হয়।
আগরতলা ও গৌহাটি রুটে বাস সার্ভিস উদ্বোধন : বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তিনটি বাস সার্ভিস উদ্বোধন করেছেন। কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা, আগরতলা-ঢাকা-কলকাতা এবং ঢাকা-শিলং-গৌহাটি রুটে তিনটি বাস চলাচল করবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় চত্বরে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে দুই প্রধানমন্ত্রী এবং পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপধ্যায় বাস সার্ভিস উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে দু’দেশের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ৩টা ৪০ মিনিট একই গাড়িতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আসেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফুলের তোড়া দিয়ে তাদেরকে শুভেচ্ছা জানান। এরপর তারা কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা বাসে যান এবং বাস যাত্রীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এরপর তারা আগরতলা-ঢাকা-কলকাতা এবং ঢাকা-শিলং-গৌহাটি রুটের বাসে যান এবং বাস যাত্রীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
পরে দুই প্রধানমন্ত্রী এবং পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী একটি সুসজ্জিত মঞ্চে উঠেন। সেখানে শেখ হাসিনা ঢাকা-শিলং-গোহাটি বাসের একটি প্রতীকী টিকেট ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপধ্যায় কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা বাসের একটি প্রতীকী টিকিট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেন। পরে দুই প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রী পতাকা উড়িয়ে তিন বাসের যাত্রীদেরকে বিদায় জানান।
গতকাল সন্ধ্যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী সোনারগাঁও হোটেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া নৈশভোজে যোগ দেন এবং তার আগে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
আজ রাষ্ট্রপতি ও খালেদা জিয়ার সাথে বৈঠক : প্রধানমন্ত্রী মোদি ঢাকা সফরের দ্বিতীয় দিনে আজ রোববার ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির ও পুরনো ঢাকায় রামকৃষ্ণ মিশন পরিদর্শনে যাবেন। তিনি পরে বারিধারায় ভারতীয় হাইকমিশনের নতুন চ্যান্সারি কমপ্লেক্সে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে প্রায় ১২টা ৪০ মিনিটে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং রাষ্ট্রপতি তাঁর সম্মানে দেয়া মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেবেন। তিনি ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর পক্ষে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ গ্রহণ করবেন। সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ বেলা ৩টা ১০ মিনিটে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়া, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এবং ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ৩৬ ঘন্টা ঢাকা সফরকালে তাঁর হোটেল কক্ষে দেখা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে ভারতীয় হাইকমিশন আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেয়ার মাধ্যমে তার দু’দিনের সফর সমাপ্ত করবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রোববার সন্ধ্যায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নরেন্দ্র মোদিকে বিদায় জানাবেন।
এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর উপলক্ষে মহানগরী ঢাকা উৎসবের সাজে সজ্জিত হয়েছে। মহানগরীর রাজপথ ও সড়ক দ্বীপগুলো বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় পতাকা এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বড় আকারের প্রতিকৃতি দিয়ে সাজানো হয়েছে।
এ ছাড়া নরেন্দ্র মোদিকে স্বাগত জানিয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়কের পাশে, সেতুর উপরে এবং গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে বিভিন্ন ব্যানার ও প্লেকার্ড স্থাপন করা হয়েছে।



https://www.facebook.com/pages/National-weeklycrime-diary/639786429398358?ref=hl

কোন মন্তব্য নেই: