https://www.facebook.com/pages/National-weeklycrime-diary/639786429398358?ref=hl
এখনও নীরব চাঁদাবাজি পরিবহন সেক্টরে ঃ
সাধারন মানুষের নাভিঃশ্বাস
আতিকুল্লাহ আরেফিন রাসেল,,ক্রাইম ডায়রি,১৫ ই এপ্রিল,২০১৫,আপডেট সময়: ১০.৩০ এ এম ঃ
পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি নতুন কিছু নয়। দেশের বিভিন্ন
বাস টার্মিনালগুলোতে প্রতিনিয়ত কোটিকোটি টাকা চাদা লেনদেন হয়। যার ফলে ফুলে ফেঁপে কোটিপতি
হচ্ছে একটি চক্র আর যার মাশুল গুনতে হচ্ছে সাধারন খেটে খাওয়া মানুষের। তেলের দাম যদি
লিটারে একটাকা বাড়ে পরিবহন মালিকেরা তখন সরকারকে চাপ দিয়ে যাত্রীপ্রতি মাথাপিছু ভাড়া
বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া বিভিন্ন উপলক্ষ্যে ভাড়া বাড়ানোর প্রতিযোগীতাতো আছেই। ইদানিংকালে
যাত্রীকে ঠকিয়ে পয়সা আদায়ের নতুন কৌশল হলো সিটিং সার্ভিস। সিটিং সার্ভিস নাম দিয়ে লোকাল
চালালেও ভাড়া আদায় করছে সিটিং। রাজধানী সহ সারাদেশে চলছে একই পরিস্থিতি।
কেস ষ্টাডি ০১ ঃ
রাজধানীর মিরপুর থেকে বিভিন্ন
গন্তব্যে ছেড়ে যাওয়া বাস গুলোর এ প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। আর রাজধানীর সবচেয়ে বেশি মানুষ
বাস করে মিরপুর এলাকাতে। বাসের সংখ্যাও তাই বেশি। এখান থেকে চলাচলকারী বিহঙ্গ,সময়নিয়ন্ত্রন,ইউনাইটেড,বিকল্প,ইটিসি,শাহআলী,স্বকল্প,সেফটি,শিকড়,শিখর,সিল্কসিটি
ইত্যাদি গাড়ি গুলো নিউমার্কেট,গুলিস্থান,সদরঘাট,মতিঝিল,কমলাপুর,যাত্রাবাড়ি,পোস্তগোলা রুটে সিটিং সার্ভিস বলে নিজেদের পরিচয় দেয় এবং ভাড়া
বৃদ্ধির পর সরকারী নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত আদায় করে সিটিং চার্জ হিসেবে। মিরপুর ১২
থেকে গুলিস্থান ভাড়া ১৮ টাকা,শেওড়া পাড়া থেকে ১৫ টাকা এরপর পরের স্টপেজ গুলোতে আরও
কম হলেও প্রত্যেক স্টপেজ থেকেই এরা ২০/২২ টাকা আদায় করছে।অথচ প্রত্যেকটা গাড়িই লোকাল
গাড়ীর মতো প্রত্যেকটা স্টপেজ থেকে যাত্রী তুলছে এবং গাড়ি ভর্তি করে দাঁড়িয়ে যাত্রী
নিচ্ছে। এভাবে যাত্রাাবাড়ি পর্যন্ত ভাড়া বিশ টাকা হলেও সিটিং অযুহাতে ভাড়া আদায় করছে
২৮ টাকা। নিউমার্কেট এলাকায় যাতায়াতাকারী প্রত্যেকটা গাড়িই একই কাজ করছে। এদিকে লোকাল
গাড়ি গুলোও থেমে নেই। ইটিসি লোকাল গাড়িগুলোর নির্ধারিত ভাড়া গুলিস্থান পর্যন্ত ১৫ টাকা
হলেও এরা যাত্র্প্রীতি সিটিং ভাড়া ২০ টাকা আদায় করছে। মিরপুর ১২ থেকে বিকল্প গাড়ি যাত্রীপ্রতি
আদায় করছে ২৪ টাকা। গাবতলী , যাত্রাবাড়ি,মহাখালি কিংবা ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে
ছেড়ে যাওয়া প্রত্যেকটা গাড়িই সিটিং ভাড়া আদায় করলেও সিটিং এবং গেটলক যাচ্ছেনা কেউই।
অথচ পরবর্তীতে সরকার তেল কিংবা গ্যাসের দাম বাড়ায়নি। ভাড়া বৃদ্ধির কোনও ঘোষনাও দেয়নি।
একবার শুধু দাম বাড়ার কথা উঠলেই দাম বাড়–ক চাই না বাড়–ক পরিবহন মালিকরা ইচ্ছেমতো ভাড়া
বাড়িয়ে দেয়। এতে দুর্ভোগে পড়ছে সাধারন মানুষ। তারা না পাড়ছে কাউকে বলতে না পাড়ছে সইতে।
কেস স্টাডি ০২ঃ
দেশের প্রত্যেক জেলা শহরগুলোতেও
একই অবস্থা বিরাজ করছে। এমনিতেই বাসওয়ালাদের স্বেচ্ছাচারিতা ,যাতায়াতে বিলম্ব,কুলিদের
বিড়ম্বনা বিভিন্ন কারনে জেলা শহরগুলোতে সিএনজির প্রচলন আগের তুলনায় অনেকগুন বেড়ে গেছে।
এতে একশ্রেনীর সুবিধা হলেও সাধারন মানুষের হয়েছে জ্বালা । তারা বিভিন্ন কাজে আগের মতো
বাহিরে যাতায়াত করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। বগুড়া থেকে গুরুত্বপুর্ন বাজার এলাকা চান্দাইকোনায়
আগে প্রচুর যাত্রীবাহী বাস থাকলেও এখন ভাড়া বৃদ্ধির কারনে যাত্রী কমে যাওয়ায় বাসের
সংখ্যাও কমেছে। ফলে দীর্ঘ সময় গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারছে
না মানুষ। চান্দাইকোনা থেকে বগুড়ার ভাড়া আগে ছিল ১৫ টাকা । কয়েক দফা বৃদ্ধির পর এখন
ভাড়া হয়েছে বিশ টাকা। কিন্তু বাস ওয়ালারা আদায় করছে ৪৫ টাকা । এ বাড়তি ভাড়া কেন তার
কোন জবান মিলেনা বাস স্টাফদের কাছে। সিরাজগঞ্জ রোড থেকে নাটোর পর্যন্ত ,নাটোর থেকে
রাজশাহী এভাবে প্রত্যেক জায়গাতেই আদায় করা হচ্ছে বাড়তি ভাড়া।
ঈদ উপলক্ষ্যে রাজধানীর প্রত্যেক
টার্মিনাল থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছেড়ে যাওয়া লোকাল বাস গুলো ইচ্ছে মতো ভাড়া আদায়
করে থাকে। এক্ষেত্রে কাউন্টারগাড়ি গুলোও পিছিয়ে
নেই। ঈদের দু’একদিন আগে টিকিট কাটতে গিয়ে দেখা গেছে, ভাড়ার চাইতে টিপস হিসেবে কিছু
বেশি না দিলে টিকিট পাওয়া যায়না। ঈদুল ফিতরের সময় শ্যামলী গাড়িতে বগুড়াগামী একটি টিকিট
কাটতে হয় ৫৫০ টাকায়। কিন্তুু টিকিটের উপর লিখে দেয় ৩৮০ টাকা। প্রশ্ন করা হলে কর্তব্যরত
টিকিট বিক্রিকারী মোঃ জীবন জানান তাদের কিছুই করার নেই, মালিক পক্ষের নির্দেশে তারা
এটা করছেন। এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য তাদের গাড়ির মালিকের ফোন নম্বর চাওয়া হলে তিনি
এ প্রতিবেদককে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। পরে বহু কষ্টে শ্যামলী পরিবহনের মালিক রমেশ
ঘোষের মোবাইল নম্বর যোগার করে ফোন দেয়া হলেও অন্য প্রান্ত হতে সারা পাওয়া যায়নি। এ
দৃশ্য শুধু শ্যামলী গাড়ির নয় সরেজমিন খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রায় সব পরিবহনেই এটা
ঘটলেও কর্তব্যরত কর্মচারীদের এহেন আচরন মালিক পক্ষ জানতে ও পারেনা। এ ব্যাপারে বিশ্বস্ত
ও নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে,রাস্তায় মালিকসমিতি,শ্রমিকসমিতি,বড় ভাই,থানা ও লোকাল
পুলিশ অফিসার,স্থানীয় মাস্তান বিভিন্ন পয়েন্টে চাঁদা প্রদান করার পর যদি দু’পয়সা কামাই
করতে হয় তাহলে বাড়তি ভাড়া আদায় না কওে উপায়ও নেই। কিছু শ্রমিকের সাথে কথা বলে দেখা গেছে,বেশির ভাগ বাসমালিক তাদের
গাড়িগুলো নির্ধারিত কন্টাতে দিয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে শ্রমিকদের কিছু স্বেচ্ছাচারিতা
লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা তাদের নির্ধারিত জমা তুলে নিজেদের ভাগের টাকা তোলার জন্য মরিয়া
হয়ে বাড়তি ভাড়া আদায় করতে বাধ্য হয় । তবে চাঁদাবাজদের দৌড়াত্ব বন্ধ করা গেলে বা কমিয়ে
আনা সম্ভব হলে পরিবহনের ভাড়া কমানো সম্ভব বলে মালিক সুত্রে জানা গেছে। এছাড়াও সারা
দেশের ১২টি ফেরিঘাটে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার চাঁদাবাজি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর
মধ্যে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়াসহ কয়েকটি ফেরিঘাটে বেপরোয়া চাঁদাবাজি চলছে। কৃত্রিম যানজট
সৃষ্টি করে প্রভাবশালী মহলের আশ্রিত একটি সন্ত্রাসী চক্র চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে জানানো হলেও তা কোনো কাজে আসেনি। সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজদের
দৌরাত্ম্যের বিরুদ্ধে পরিবহন মালিক নেতৃবৃন্দ আগেও তীব্র আপত্তি জানিয়ে চাঁদাবাজি বন্ধ
করা না হলে ধর্মঘটের হুঁশিয়ারি প্রদান করেন। এখন আবার আগের মতোই নৈরাজ্য সৃষ্টি করে
প্রতিটি ফেরিঘাট থেকে লাখ লাখ টাকা লুটে নেয়ার অপতৎপরতা শুরু হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চাঁদাবাজি বন্ধ করার জন্য আইন-শৃক্মখলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর
হলেও প্রতি ফেরিঘাটে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠিত হওয়ায় অবৈধ চাঁদাবাজি এখন বৈধতা লাভ করেছে।
কমিটিগুলোতে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাসমূহের প্রতিনিধি ছাড়াও পরিবহন মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধি
এবং স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ রয়েছেন। এখন থেকে ফেরিঘাটে প্রতি গাড়িতে ২০ টাকা হারে চাঁদা
দিতে হবে এবং প্রতি ট্রাকে চাঁদার পরিমাণ আরো
বেশি। পরিবহন মালিক নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেছেন, এই চাঁদাবাজির ভাগবাটোয়ারা উচ্চ পর্যায়ে
পৌঁছানোর জন্যই এই পন্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তারা জানিয়েছেন, বিআইডব্লিউটিএ, বিআইডব্লিউটিসি, বিআরটিএ
ও পুলিশের সমন্বিত তৎপরতা অব্যাহত থাকার পরও আরেকটি কমিটি গঠন করার কোনো প্রয়োজন নেই।
সম্প্রতি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে নৌপরিবহন মন্ত্রী পরিবহন মালিকদের ওপর এই অযৌক্তিক
সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছেন যার ধাক্কা গিয়ে পড়বে যাত্রীসাধারণ এবং ক্রেতাদের ওপর। দেশের
পরিবহন সেক্টরে ঘাটে-ঘাটে চাঁদাবাজি চলছে দীর্ঘদিন ধরে। চাঁদাবাজি বন্ধে নানা ব্যবস্থা
গ্রহণের কথা সরকারি তরফে শোনা গেলেও বাস্তবে এর কোনো সুফল দেখা যায়নি বরং কোনো কোনো
ফেরিঘাটে চাঁদাবাজি অব্যাহত রয়েছে বেপরোয়া ও উদ্বেগজনকভাবে। কাঁচামাল পরিবহনে চাঁদাবাজি
অব্যাহত থাকায় পরিবহন ব্যয়ও বহুগুণে বেড়ে যাচ্ছে এবং এতে করে ভোক্তা পর্যায়ে ক্রেতাসাধারণ
বেশি দাম দিতে বাধ্য হচ্ছেন। বেপরোয়া চাঁদাবাজির কারণে বিআইডব্লিটিসি, সরকারদলীয় ক্যাডার
এবং পুলিশের হাতে জিম্মি দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২২ জেলার পরিবহন মালিকসহ যাত্রীসাধারণ।
বিভিন্ন ফেরিঘাটের দুই তীরে কৃত্রিম যানজট সৃষ্টি করে পণ্যবাহী পরিবহনে চালানো হচ্ছে
বেপরোয়া চাঁদাবাজি। অপরদিকে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে রাজধানী ঢাকার বাজার পর্যন্ত ট্রাকপ্রতি চাঁদা আদায় করা হচ্ছে কয়েক হাজার টাকা।
ঘাট এলাকায় প্রতিদিন ২০ লাখ টাকারও বেশি চাঁদাবাজি চলছে। এছাড়া ফেরি ছাড়ার পর মাঝ নদীতে
নৌকাযোগে উঠে একশ্রেণীর অপরাধী যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী পরিবহন সংশ্লিষ্টদের কাছ
থেকে প্রকাশ্যে চাঁদা আদায় করে। ফেরিঘাটে চাঁদাবাজির বৈধতা দানের তৎপরতায় পরিবহন মালিকরা
ক্ষুব্ধ হলেও এতে কায়েমী স্বার্থবাদী মহলের হয়েছে পোয়াবারো। অনেকেরই প্রচুর বিত্তের
মালিক বনে যাওয়ার রাস্তা খুলে গেছে। পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের নানা কল্যাণের ধুয়া তুলে
এক শ্রেণীর নেতা নামধারী চাঁদাবাজরা ইতোমধ্যেই চাঁদাবাজির অঢেল টাকায় ফুলে-ফেঁপে নব্য
কোটিপতি হয়ে গেছে। প্রশাসন ও পুলিশ সবকিছু জানা সত্ত্বেও চাঁদাবাজি বন্ধ করার কোনো
কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। পরিবহন সেক্টর দেশের অর্থনীতি থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রের
জন্য গুরুত্বপূর্ণ। লুটেরা ও কায়েমী স্বার্থবাদী চক্র যেভাবে এই সেক্টরে জেঁকে বসে
আছে তাদের ভয়ংকর থাবা থেকে অবিলম্বে পরিবহন সেক্টরকে মুক্ত করা জরুরি বলে আমরা মনে
করি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন