জাতীয় সাপ্তাহিক ক্রাইম ডায়রি একটি অপরাধ বিষয়ক পত্রিকা।।

national weeklycrime diary

national weeklycrime diary
ক্রাইম ডায়রি(জাতীয় সাপ্তাহিক, অনলাইনদৈনিক, অনলাইন টেলিভিশন ও অপরাধ গবেষণা )

শুক্রবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫


শিক্ষায় ভ্যাট কেন???

এড.মোঃ সোহরাব হোসেন ভুইয়া(মিঠু),বিশেষ প্রতিনিধি,ক্রাইম ডায়রি,১২/৯/১৫ইং,ঢাকাঃ
শিক্ষার্থীরা বাসে উঠলে হাফ ভাড়া দেয়ার সময় যুক্তি দেখায় আমরা কি ইনকাম করি যে ফুল ভাড়া দিব।। সেইসব কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ভ্যাট দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাবে এমনটি কল্পনা করাও কঠিন ব্যাপার। পিতামাতার চান তাদের সন্তান সুশিক্ষিত হোক। সেজন্য ভিটেমাটি বিক্রি করে হলেও তারা সন্তানের লেখাপড়া চালিয়ে যান। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমনিতেই শিক্ষাখরচ অনেক বেশি। এর উপর যদি বাড়তি ভ্যাট আরোপ করা হয় তবে তা অত্যন্ত দুঃখ জনক।টিউশন ফির ওপর আরোপিত মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রত্যাহারের দাবিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন। 'শিক্ষার্থীরা নয়, ভ্যাট দেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ'_ সরকারের পক্ষ থেকে এমন ব্যাখ্যা দেওয়া হলেও পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি শান্ত হয়নি। ভ্যাট প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ-কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তবে গত রাতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি বলেছে, এই ভ্যাট শিক্ষার্থীদের দিতে হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই ভ্যাট দেবে।সমিতির জরুরি এক সভা শেষে সভাপতি শেখ কবির হোসেন সমকালকে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বুধবার ঘোষণার পর শিক্ষার্থীদের ওপরে কোনোভাবেই আর ভ্যাট বর্তায় না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ট্রাস্টি বোর্ডের ওপরই এ দায়িত্ব বর্তায়। কী করে ভ্যাট পরিশোধ করা হবে তা ট্রাস্টি বোর্ড সদস্যদের ব্যাপার। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলন ছেড়ে ক্লাসে ফিরে আসবে। তারা লেখাপড়ায় মনোযোগী হবে। এদিকে গতকাল এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকরাই ভ্যাট দেবেন। এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে 'সমঝোতা' হয়েছে। গতকাল রাতে সোনারগাঁও হোটেলে ডেইলি স্টার ও আন্তর্জাতিক লজিস্টিক সার্ভিস প্রতিষ্ঠান ডিএইচএল আয়োজিত 'বিজনেস অ্যাওয়ার্ড' অনুষ্ঠানে যোগদানের আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। তার মতে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা নেই।
বিশ্ববিদ্যালয় মালিকদের নতুন এ ঘোষণা দেওয়ার পরও 'নো ভ্যাট ইন এডুকেশন' এর ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা গত রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ঘোষিত কর্মসূচি প্রত্যাহার করেনি। তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
শিক্ষায় ভ্যাট আরোপ নতুন না হলেও এবার এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এর আগে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোর টিউশন ফির ওপরে ভ্যাট আরোপ করা হয়। তা এখনও বহাল আছে। তবে প্রকৃতপক্ষে শিক্ষায় ভ্যাট আরোপের যৌক্তিকতা আদৌ আছে কি-না তা নতুন করে ভেবে দেখার অনুরোধ জানিয়েছে সমাজের বিশিষ্টজন। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষাবিদ, সংবিধান বিশেষজ্ঞ, ভ্যাট কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের অনেকেই বলেছেন, শিক্ষা মৌলিক অধিকার। এটা কোনো পণ্য ও সেবা নয়। শিক্ষায় ভ্যাট বসানো ঠিক হয়নি। উচ্চ শিক্ষায় ভ্যাট আরোপ অযৌক্তিক বলেও মনে করেন তারা। তারা আরও বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভ্যাট পরিশোধ করলেও মূলত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেই তা আদায় করে নেওয়া হবে। ফলে পরোক্ষভাবে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের ওপরই করের বোঝা এসে পড়বে। একই আশঙ্কা প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরাও। জানা গেছে, গত জুলাইয়ে ভ্যাট আরোপ করার পর দেশের অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে ইতিমধ্যেই আগের চেয়ে বেশি টিউশন ফি আদায় করছে।এনবিআর বলেছে, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করার জন্য নতুন করে ভ্যাট আরোপ করা হয়নি। বিদ্যমান টিউশন ফির মধ্যেই ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত আছে। রাজস্ব বোর্ডের বক্তব্য অনুযায়ী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত করেই শিক্ষার্থীদের জন্য টিউশন ফি নির্ধারণ করতে হবে। বিষয়টি আরও পরিষ্কার করে বলা যায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১০০ টাকা টিউশন ফি আদায় করলে এর মধ্যে নির্ধারিত ৭ টাকা ৫০ পয়সা ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। বাকি ৯২ টাকা ৫০ পয়সা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নেবে। ভ্যাট আরোপের ফলে বাড়তি টিউশন ফি নিতে হবে না।বর্তমানে দেশে ৮৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় চার লাখ। যোগাযোগ করা হলে এনবিআরের সাবেক সদস্য আলী আহমেদ বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্যাট আরোপের বিষয়ে এনবিআরের বক্তব্য সঠিক নয়। তার ভাষায়, এটা তাদের বোকামি হয়েছে। তিনি বলেন, যেভাবেই বলা হোক না কেন ভোক্তা হিসেবে শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ওপরই এই ভ্যাট চাপবে।এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, এ খাত থেকে সর্বসাকল্যে ভ্যাট আদায় হতে পারে মাত্র ৫৫ থেকে ৬০ কোটি টাকা। সাবেক ভ্যাট কমিশনার আবদুল্লা কাফি বলেন, দেশে অনেক সম্ভাবনাময় খাত আছে। ওই সব খাত থেকে শিক্ষা খাতের চেয়ে পাঁচ গুণ ভ্যাট আদায়ের সুযোগ আছে। সামান্য কয়েক কোটি টাকার জন্য শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ঠেলে দেওয়া ঠিক হয়নি।কিন্তু এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, সেবা খাত হিসেবে শিক্ষায় ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। বর্তমান আইনে শিক্ষাসহ অন্তত ১০০টি সেবা খাত আছে । এসব খাতে বিভিন্ন হারে ভ্যাট আরোপিত আছে। নিয়ম অনুযায়ী পণ্য ও সেবা খাত থেকে ভ্যাট আদায় করা হয়। তবে সেবার মধ্যে ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত থাকে। অপরদিকে, পণ্যে ভ্যাট যোগ করা হয় না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পাশাপাশি বর্তমানে ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাড়ে ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট রয়েছে।খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় গত জুলাই থেকেই ভ্যাট বাবদ বাড়তি টাকা আদায় করেছে। টিউশন ফি হিসেবে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের (ইউল্যাব) সাংবাদিকতা বিভাগের দশম সেমিস্টারের ছাত্র শামিমুজ্জামান শাকিল প্রতি সেমিস্টারে ৪৮ হাজার টাকা পরিশোধ করতেন। কিন্তু গত ৪ জুলাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভ্যাট আরোপ করায় চলতি সেমিস্টারে তাকে টিউশন ফির সঙ্গে অতিরিক্ত পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। একইভাবে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র রেজা চৌধুরী জানান, তাকেও টিউশন ফির সঙ্গে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ টাকা হিসাব করে অতিরিক্ত টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। এভাবেই এ বছর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আরোপিত ভ্যাটের টাকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত আদায় করেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে এই ভ্যাট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেন দেবে না।ভ্যাট আরোপের বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর যুক্তি হচ্ছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে, তাদের বেশির ভাগই অবস্থাসম্পন্ন পরিবারের। তা ছাড়া এ খাতে ভ্যাটের হার সাড়ে ৭ শতাংশ। এটি খুবই কম, যা শিক্ষার্থীদের দেওয়ার সামর্থ্য আছে।এর আগে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের আমলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছিল। তখন এটা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হলে পরে তা প্রত্যাহার করা হয়।
এদিকে ক্রাইম ডায়রির বিশেষ প্রতিনিধিকে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শিক্ষা নিয়ে কাজ করা গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীই উচ্চবিত্ত নয়। মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত অনেক শিক্ষার্থীও এখানে পড়াশোনা করেন। ভ্যাট আরপের আগে তাদের কথাও সরকারকে ভাবতে হবে। শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীরা কোনো ইনকাম গ্রুপ নয়, তাই তাদের কাছ থেকে কর আদায় না করার সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত। শিক্ষা কোনো পণ্য হতে পারে না।বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পিআরইর নির্বাহী পরিচালক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাবেক কর্মকর্তা ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্যাট আরোপের বিধান বৈষম্যমূলকও অযৌক্তিক। কেননা, এখানে স্বচ্ছল পরিবারের পাশাপাশি অনেক অসচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীরাও লেখাপড়া করছে। তা ছাড়া শিক্ষা মৌলিক অধিকার। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক বিষয়ের ওপর কর আরোপ করা যায় না। সরকারের উচিত হবে, এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা। আর প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক বলেন, ভ্যাট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দেওয়া উচিত। শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না।

https://www.facebook.com/pages/National-weeklycrime-diary/639786429398358?ref=hl

কোন মন্তব্য নেই: