জাতীয় সাপ্তাহিক ক্রাইম ডায়রি একটি অপরাধ বিষয়ক পত্রিকা।।

national weeklycrime diary

national weeklycrime diary
ক্রাইম ডায়রি(জাতীয় সাপ্তাহিক, অনলাইনদৈনিক, অনলাইন টেলিভিশন ও অপরাধ গবেষণা )

শনিবার, ১২ মার্চ, ২০১৬


 বাংলার তরমুজে আছে একশ ভায়াগ্রার শক্তি



আজহারুল ইসলাম : বাজারে তরমুজের আমদানী শুরু হয়েছে কিন্তু কিছু অসৎ ব্যবসায়ীর অধিক মুনাফার আশায় এই স্বুসাদু ফল আজ সচেতন মানুষের কাছে আতঙ্ক। প্রথমেই নেতিবাচক মন্তব্য দিয়ে শুরু করতে বাধ্য হচ্ছি কারণ ক্রেতা আকৃষ্ট করার জন্য ইঞ্জেকশনের সুই দিয়ে তরমুজের ভেতরে পুশ করা হয় কৃত্রিম রঙ ও স্যাকারিন যা মানবদেহের জন্য কার্সিনোজেনিক। এ ছাড়া গ্যাস লাইটে ব্যবহৃত ইথিলিন তরমুজে দেয়া হয় লাল করার জন্য। এই তরমুজ খেয়ে ডায়রিয়া, বমি ও জ্বর হয়। বেশি খেলে এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। তরমুজ ছাড়াও অন্যান্ন ফলেও ব্যবহার হচ্ছে বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক যা মানবদেহের জন্য হুমকিস্বরূপ। ফল পাকাতে সর্বাধিক প্রচলিত কেমিকেল হলো ক্যালসিয়াম কার্বাইড। এর ব্যবহারে মানবদেহের অপুরণীয় ক্ষতি সাধিত হয়।

ক্যালসিয়াম কার্বাইড সাধারণত স্টিল মিলে, ওয়েল্ডিংয়ের কাজে এবং আতশবাজি বা ছোট বোমা বানানোর কাজে ব্যবহার করা হয়। অসাধু ব্যবসায়ীরা এটিকে বিভিন্ন ফল পাকানোর কাজে ব্যবহার করে থাকে। ক্যালসিয়াম কার্বাইড পানি বা জলীয় বাষ্পের সঙ্গে মিশে ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড ও এসিটাইলিন গ্যাস সৃষ্টি করে। এই এসিটাইলিন গ্যাস ইথিলিনের মতো কাজ করে। ফলে সহজেই আমসহ যে কোনো কাঁচা ফল পেকে যায়। ক্যালসিয়াম কার্বাইড দামে খুব সস্তা হওয়ায় দেশের ফল ব্যবসায়ীরা অজ্ঞতাবশত বা অতি মুনাফার লোভে সহজলভ্য ক্যালসিয়াম কার্বাইড দিয়ে ফল পাকিয়ে থাকে।

সাধারণত ক্যালসিয়াম কার্বাইড পানিতে মিশিয়ে সেই পানিতে ফল ভেজানো হয় বা ফলে স্প্রে করা হয়। ক্যালসিয়াম কার্বাইড পানির সঙ্গে মিশে এসিটিলিন নিঃসৃত করে ফল পাকিয়ে দিচ্ছে। একই সঙ্গে ক্যালসিয়াম কার্বাইড ফলের ত্বকে বিদ্যমান লেন্টিসেল ভেদ করে ফলের ভেতরে শাসে ঢুকে যায়। এই ক্যালসিয়াম কার্বাইডে মারাত্মক বিষ হিসেবে মিশ্রিত থাকে আর্সেনিক ও ফসফরাস। এই আর্সেনিক ও ফসফরাস ফলের ভেতর ঢুকে যায় ও ফল পাকার পরও ভেতরে এই আর্সেনিক ও ফসফরাস থেকে যায়। এই ফল খাওয়ার পর ক্যান্সার, মুখের প্রদাহ, ফুসফুসের সমস্যা, বিকলাঙ্গ ও মানসিক প্রতিবন্ধী বাচ্চার জন্ম এবং এবোরশানের মত ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

ফল পাকার সময় হলে প্রাকৃতিকভাবে ফলে ইথিলিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। ইথিলিন ফলের এক ধরনের এনজাইম নিঃসৃত করে যাকে ‘এমাইলেজ’ বলে। এমাইলেজের কাজ হলো ফলের জটিল শর্করাকে বিভাজন করে সাধারণ শর্করা বা সুক্রোজ এবং ফ্রুক্টোজে রূপান্তরিত করা। ফলে ফল নরম ও সুস্বাদু হয়। পেক্টিনেজ এনজাইমের কাজ হলো ফলের ত্বককে নরম করা। পাশাপাশি ত্বকের ক্লোরোফিল (যা সবুজ রঙ দেয়) পরিবর্তিত হয়ে কেরোটিনয়েড হয়ে যায়, ফলে ফলের রঙ বদলে পাকা বা হলুদ রঙ ধারণ করে। এই প্রাকৃতিক ইথিলিনের কাজটা যখন ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করে করা হয় তখন ফল বিষে রূপান্তরিত হয়।

যাই হোক তরমুজ নিয়ে লিখতে গিয়ে কৃত্রিম উপায়ে ফল পাকানোর ব্যাপারটা তুলে না এনে পারলাম না কারণ আমরা কিছু অসৎ লোকের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছি, জনস্বাস্থ্য আজ হুমকির মুখোমুখি। বাজার থেকে সহজলভ্য ও পুস্টিগুণসম্পন্ন ফল কেনার সময় এক পা এগিয়ে দুপা পিছিয়ে আসতে হয়। আমরা কতই না অসহায়! তরমুজের জন্মস্থান আফ্রিকা কিন্তু বর্তমানে সারা পৃথিবীতে এর দেখা মিলে। Watermelon নামটাও আফ্রিকানদের দেওয়া। এমন নামকরণের কারণ হলো অভিযাত্রীরা একে পানির বিকল্প উৎস হিসেবে ব্যবহার করতো। এর বহিরাবরণ খুবই পুরু ও ভৈতরে সুমিষ্ট পানি সমৃদ্ধ হওয়ায় অভিযাত্রীরা একে পানির আধার হিসেবে সাথে রাখত পিপাসা মেটানোর জন্য।

১৯৯৮ সালে বিশ্বের নামকরা যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সিলডিনিফিল সাইট্রেট আবিষ্কার করে সারা দুনিয়াতে আলোড়ন সৃস্টি করে। উচ্চ রক্তচাপে ব্যবহারের ফলে কিছু সাইড এফেক্ট দেখা দেয়। যাই হোক পরবর্তীতে আবিষ্কৃত ওষুধটি ইন্ডিগেশনে (এখানে উচ্চ রক্তচাপ) ব্যবহার না হয়ে সাইড এফেক্টে ব্যবহার হচ্ছে, ফলে এখন এর সাইড ইফেক্টটাই হলো প্রধান ইন্ডিগেশান। আগেই বলেছি সিলডিনিফিল সাইট্রেট আবিষ্কারের পর দুনিয়াতে আলোড়ন সৃস্টি হয়ে গিয়েছিল। এর শেয়ারের দাম বেড়ে আকাশচুম্বি হয়ে গিয়েছিল। সারা দুনিয়ার গনমাধ্যমগুলো ফলাও করে প্রচার করেছিল এই সাফল্য। প্রিয় পাঠক সিলডিনিফিল সাইট্রেটের বাণিজ্যিক নাম হচ্ছে ভায়াগ্রা। এত ভূমিকা দিলাম এই কারণে তরমুজে যে উপাদান পাওয়া যায় তা ভায়াগ্রার মতই কার্যকর। বিজ্ঞানীরাও তাই দাবি করেছেন, অর্থাৎ ভায়াগ্রার মতোই কার্যকর হচ্ছে তরমুজ।



তরমুজে সিট্রোলিন নামের অ্যামাইনো অ্যাসিডের পরিমাণ এতো বেশি যে, যা আগে বিজ্ঞানীরা ধারণাও করতে পারেননি। কারণ বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, সিট্রোলিন সাধারণত ফলের অখাদ্য অংশেই বেশি থাকে। সাম্প্রতিক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা স্বীকার করেছেন তরমুজে সিট্রোলিন আছে, এটা আমাদের জানা কথা। কিন্তু এটা জানতাম না যে, সিট্রোলিনের পরিমাণ তাতে এতো বেশি থাকতে পারে। গবেষকরা ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, মানবদেহ সিট্রোলিনকে আরজিনিনিন নামের যৌগ পদার্থে রূপান্তরিত করে। আরজিনিনিন হচ্ছে ভিন্ন মাত্রার অ্যামাইনো অ্যাসিড, যা নাইট্রিক অ্যাসিডের অগ্রদূত হিসেবে কাজ করে। আবার নাইট্রিক অ্যাসিড দেহের রক্তবাহী শিরা বা ধমনীর প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর রক্তবাহী শিরা বা ধমনীর প্রসারণের কারণেই মানুষের বিশেষ অঙ্গটি সক্রিয় হয়। আর ভায়াগ্রাও (সিলডিনিফিল সাইট্রেট) দেহের নাইট্রিক অ্যাসিডকে সক্রিয় করার মাধ্যমে কৃত্রিম পন্থায় দেহে জৈবিক উত্তেজনা সৃষ্টি করে। তবে বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি, জৈবিক তাড়না সৃষ্টি করতে একজন অক্ষম পুরুষকে ঠিক কত পরিমাণ তরমুজ গিলতে হবে।

তরমুজ আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। তরমুজে আছে প্রচুর ভিটামিন-এ। আর এটি ত্বকের সুস্থতা রক্ষায় প্রয়োজনীয়। এ ছাড়া এটি ভিটামিন সি-এরও উৎস, যা ত্বকের কোলাজেন কলারের নমনীয়তা বজায় রাখে ও ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে। এক কাপ তরমুজ কুচিতে আপনি পেয়ে যাবেন সারা দিনের চাহিদার ২১ শতাংশ ভিটামিন-সি এবং ১৭ শতাংশ ভিটামিন-এ। সবচেয়ে বড় কথা, এই গরমে ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা করা খুবই দরকার। আর তরমুজে ৯২ শতাংশই পানি। গরমে তরমুজ খেলে তাই ত্বকের আর্দ্রতা নষ্ট হবে না। সব মিলিয়ে বলা যায়, ত্বকের সুস্থতার জন্য তরমুজ মোটামুটি অপরিহার্য।

আমরা শুধু তরমুজের ভেতরের লাল অংশটিই খেয়ে থাকি এবং বীজগুলো ফেলে দেই কিন্তু এর বীজ আমাদের দেহের জন্য অনেক উপকারী। শুকিয়ে ভেজে খেতে পারেন। অথবা রান্নায় ব্যবহার করতে পারেন। প্রচুর ভিটামিন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রনে ভরপুর তরমুজের বীজ আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়তা করে। তরমুজের বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যা চুলের জন্য অনেক বেশি কার্যকরী। এ ছাড়াও উপস্থিত অ্যামিনো এসিড চুল করে তোলে মজবুত। তরমুজের বীজে মেলানিন নামক পিগমেন্ট তৈরি করে যা চুলের রঙ কালো রাখতে সাহায্য করে। তাই তরমুজের বীজ ভাজা প্রতিদিন খাওয়ার অভ্যাস করলে চুল সাদা হওয়ার সমস্যাও দূর হবে।


https://www.facebook.com/pages/National-weeklycrime-diary/639786429398358?ref=hl

কোন মন্তব্য নেই: