ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গায় একদল সৌরবিদ্যুৎ কর্মী সৌরবিদ্যুৎ গ্রাহকের বাড়িতে ঋনের টাকা আদায় করতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার হয়েছেন। ঘটনা সুত্রে জানা গেছে, জেলার ভাঙ্গা থানার চুমুরুদ্দী বাজার এলাকার খালপাড় সংলগ্ন স্থানীয় বাসিন্দা আবুল বাশার বছর পাঁচেক আগে সাইফ  পাওয়ার নামের একটি প্রতিষ্ঠান হতে কিস্তিতে সোলার প্যানেল ক্রয় করে। শুরুর দিকে নিয়মিত কিস্তি দিলেও ৩৬ হতে ৬০ কিস্তির বিপরীতে সে মাত্র ২০ কিস্তি পরিশোধ করে। বাকী কিস্তির টাকার জন্য ঋনদাতা সাইফ পাওয়ার এর কর্মীরা চাপ দিলে সে আজকাল করে ঘোরাতে থাকে। সর্বশেষে গতকাল ২২/০৩/২০১৭ইং তারিখ বেলা ১১টায় সাইফ পাওয়ারের শাখা ম্যানেজার সহ কর্মীরা কিস্তি আদায় করতে যায়। এসময় তাদের সাথে তাদের দাতা প্রতিষ্ঠান ইনফ্রাস্টাকচার ডেভলপমেন্ট কোম্পানী লিমিটেড( ইডকল) এর সমন্বয়কারী খাদেমুলসহ সমমানের আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শাখা ম্যানেজারসহ কর্মীরা উপস্থিত ছিল। গ্রাহক আবুল বাশার কিস্তি দিতে অস্বীকৃতি জানালে সাইফ পাওয়ারের কর্মীরা সৌরপ্যানেল খুলে দিতে বলে। বাশারের পরিবার প্যানেল খুলে দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এমতবস্থায়, সাইফ পাওয়ারের কর্মীরা বাশারের গৃহে প্রবেশ করে সৌর প্যানেল খুলে আনতে চেষ্টা করলে বাশারের স্ত্রী তাতে বাঁধা দেয়। এসময় বাড়ির অন্যান্য মহিলা ও শিশুদের চিৎকারে প্রতিবেশী ও পথচারীরা জড়ো হয়ে সৌরবিদ্যুৎ কর্মীদের গণপিটুনির দেয়।এতে সাইফ পাওয়ার,আভা ফাউন্ডেশন,ইনজেন ও গ্রামীণ শক্তির শাখা ম্যানেজারসহ উপস্থিত কর্মীরা গণপিটুনির শিকার হয়। পরে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিরা এসে তাদের উদ্ধার করে।আহতরা নিজ উদ্যোগে স্থানীয় হাসপাতাল ও ডিসপেনসারীতে প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহন করে। বিস্বস্ত সুত্রে জানা গেছে, এসমস্ত প্রতিষ্ঠানকে ঋনদান করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে গ্রাহকের নিকট কিস্তিতে সৌর বিদ্যুৎ বিক্রয়ের দায়িত্ব দিয়েছে ইডকল।

ইডকলের অভিযোগ শুরুতে এসমস্ত প্রতিষ্ঠান নিয়মিত কিস্তি দিলেও বিগত বছর হতে ঋনের বিপরীতে কিস্তি প্রদান কমিয়ে দেয়। চাপ দিলে বলে যে ঋন ঠিকভাবে আদায় করা যাচ্ছেনা, গ্রাহকেরা নিয়মিত কিস্তি দেয়না। প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিযোগের সত্যতা যাচাই করার জন্য ইডকল একটি যাচাই টিম গ্রহণ করে এবং ইডকলের সমন্বয়করা ঋনগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানগুলোর স্থানীয় ম্যানেজার ও কর্মীদের নিয়ে একজন করে সমন্বয়কের নেতৃত্বে টিম গঠন করে অনাদায়ী গ্রাহকের বাড়িতে কিস্তি আদায় করতে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় ভাঙ্গা অঞ্চলের ইডকলের সমন্বয়ক খাদেমুলের নেতৃত্বে সাইফ পাওয়ার,আভা ফাউন্ডেশন,ইনজেন ও গ্রামীন শক্তি সহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় শাখার কর্মীদের নিয়ে একটি টিম গঠন করে অনাদায়ী গ্রাহক বাশারের বাড়িতে কিস্তি তুলতে গিয়েছিল।
এদিকে স্থানীয় সৌরবিদ্যুৎ গ্রাহকরা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, প্রথমে তারা সৌর বিদ্যুৎ টাকা দিয়ে কিনলেও পরে অনেকে সৌর বিদ্যুৎ সরকারীভাবে ফ্রি পেয়েছেন। আর ইডকলও সরকারী প্রতিষ্ঠান। তারা যাদের থেকে সৌর সিস্টেম কিনেছেন তারা ইডকলের সিল মারা সৌর সিস্টেমই তাদের নিকট বিক্রি করেছেন। সুতরাং তারা এটা পরিস্কার যে, এনজিও গুলো ফ্রি সৌরসিস্টেমই টাকা দিয়ে বিক্রি করে তাদের সাথে প্রতরণা করেছে। তাই তারা পুর্বে না জেনে কিস্তি দিলেও এখন তারা এর বিপরীতে কিস্তি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এদিকে এ ঘটনায় গ্রামবাসী মামলা দায়ের করেছে এমন গুজবের প্রেক্ষিতে ক্রাইম ডায়রির পক্ষ হতে থানায় যোগাযোগ করা হলে ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ আব্দুল্লাহ জানান, এ ব্যাপারে থানায় কেউ কোন অভিযোগ দায়ের করেনি।
অন্য একটি সুত্রে জানা গেছে, এ ঘটনার পর হতে আতংকে আছেন ঐ এলাকার সৌর বিদ্যুৎ কর্মীরা। তারা এখন কিস্তি তুলতে যেতে ভয় পাচ্ছেন। তারা বিভিন্ন এলাকায় ক্রাইম ডায়রির নিজস্ব অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রায়ই এমন পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন সৌরবিদ্যুৎ কর্মীরা। দাতা প্রতিষ্ঠান ইডকল এ সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে মাঠে নামালেও পাশাপাশি সরকারের ফ্রি টি আর এবং কাবিখার কারনে সাধারনের মনে ধারণা তৈরি হয়েছে কিস্তিতে বিক্রিত এ সৌর প্যানেলগুলি আসলে ফ্রি। এনজিও গুলো তাদের নিকট হতে এগুলো বিক্রি করে ফাঁকি দিয়ে টাকা নিয়েছে।
তাই তারা বাকী কিস্তির টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। অন্যদিকে সৌরবিদ্যুৎ কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,তারা এখন গণপিটুনী আতংকে কিস্তি আদায় করতে যেতে ভয় পাচ্ছেন। ইডকলের স্থানীয় সমন্বয়ক খাদেমুলের ০১৭৫৫৫৭৯৬১৮ নম্বরে ক্রাইম ডায়রির এ প্রতিনিধি ফোন দিলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তারা কিস্তি আদায় হয়না এমন ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য এমন টিম করেছিলেন এবং গ্রাহকের হাতে কর্মী ও ম্যানেজারদের আহত হওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন গ্রাহকরা পূর্বে ঠিকমতো কিস্তি দিলেও এখন কিস্তি দিতে তালবাহানা করছেন। এ সময় তাকে আহতদের দায় দায়িত্ব কে নিবে এবং টি আর কাবিখার কারনে এখন গ্রাহকরা কিস্তি দিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে কিনা? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি কৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং উদ্ধর্তন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলতে অনুরোধ করেন।
ক্রাইম ডায়রি/জেলা/