প্রকাশ্যে লোক ভাড়া করে ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি
এ দৃশ্য শুধু চট্টগ্রামের নয় এ দৃশ্য যেন সারা
বাংলার।এ দুর্ভোগ শুধু চট্টগামবাসীর নয় বাংলার সমগ্র জনতার। প্রকাশ্য
দিবালোকে শুধু নয় রাতের আধারের দৃশ্য আরও
ভয়াবহ।। চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ
পয়েন্টে যানবাহন থামিয়ে চাঁদাবাজি করতে নতুল কৌশল অবলম্বন করছে চট্টগ্রাম
মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্ট ও কনস্টেবলরা। শুধু দূরপাল্লার
মালবাহী গাড়ি থেকে চাঁদা আদায় করতে ট্রাফিক পুলিশের নিয়োগ দেওয়া শতাধিক
টেন্ডল (চাঁদাবাজ) দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে দায়িত্ব পালন করছে।
ট্রাফিক
পুলিশের এসব টেন্ডল একজন ট্রাফিক সার্জেন্টকে দিনভর চাঁদা আদায় করে দেন।
ওই চাঁদাবাজদের দৈনিক ৫০০-৬০০ টাকা পরিশোধ করেন ট্রাফিক সার্জেন্টরা।
ট্রাফিক পুলিশ কর্তৃক অলিখিত নিয়োগ পেয়ে এসব চাঁদাবাজ নগরীতে অনেকটা
বেপরোয়া। নগরীর প্রতিটি মোড়ে মোড়ে পুলিশের হয়ে এদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা
যায়। কাজ চাঁদাবাজি হলেও ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা এদের নাম দিয়েছে
‘টেন্ডল’। আগে ট্রাফিক সার্জেন্টদের উপস্থিতিতে কনস্টেবলদের চাঁদা আদায়
করতে দেখা গেলেও সেই দায়িত্ব পালন করছে এখন ভাড়া করা টেন্ডলরা।
চট্টগ্রাম নগরীর অলংকার মোড়, এ কে খান মোড়, বারিক বিল্ডিং মোড়, জিইসি মোড়,
সিটি গেট মোড়, দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর, আগ্রাবাদসহ নগরীর প্রতিটি
গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম মোড়ে টেন্ডলদের চাঁদাবাজি করতে দেখা যায়।
চট্টগ্রাম জেলা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি শফিকুর রহমান
অভিযোগ বলেন, ‘আগে ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্টরা কনস্টেবল পাঠিয়ে চাঁদা নিত।
এখন সার্জেন্টদের নিয়োগ দেওয়া সাদা পোশাকধারী কিছু লোক মোড়ে মোড়ে গাড়ি
থামিয়ে টাকা আদায় করে। টাকা নিয়ে তারা সার্জেন্টদের হাতে তুলে দেয়। নগরীর
অলংকার মোড়, সিটি গেট, নয়া বাজার, জিইসি, নতুন ব্রিজ, কালুরঘাট,
বহদ্দারহাট, সদরঘাট এলাকায় পুলিশের ভাড়া করা এসব লোক ব্যাপক চাঁদাবাজি
করছে। এসব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আমরা ট্রাফিকের ডিসির কাছে সুনির্দিষ্ট
তথ্য-প্রমাণসহ অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।’
সরেজমিন অনুসন্ধান : ২৭ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) বেলা সোয়া ১টা। চট্টগ্রাম
নগরীর অলংকার মোড়। সড়কের পাশে দাঁড়ানো আছেন সার্জেন্ট সাহেদ ইকবাল,
কনস্টেবল মনির ও আমিনুল এবং সাদা পোশাকে থাকা এক যুবক। সিটি গেট এলাকার দিক
থেকে একটি খালি ট্রাক (ফেনী-ট-১১-০৩৮৮) আসতে দেখে থামার সংকেত দেন ট্রফিক
পুলিশের কনস্টেবল আমিনুল। সঙ্গে সঙ্গে ট্রাকের চালকের কাছে এগিয়ে যান সাদা
পোশাকধারী ব্যক্তি। তার হাতে ১০০ টাকার কয়েকটা নোট গুঁজে দেন চালক। ট্রাক
চলে যাওয়ার পর সার্জেন্টের কাছে গিয়ে ওই টাকা দিয়ে আসেন সাদা পোশাকধারী
ব্যক্তিটি। ট্রাক-কাভার্ডভ্যানের কাছ থেকে এভাবেই একের পর এক চাঁদা আদায়
করতে দেখা নগরীর প্রতিটি মোড়ে।
অভিযোগ আছে, চট্টগ্রাম নগরীর সিটি
গেট থেকে নিমতলা ছাড়া অন্যসব স্থানে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ট্রাক ও
কাভার্ডভ্যান চলাচলে পুলিশের নিষেধাজ্ঞা আছে। এই নিষেধাজ্ঞা না মেনে
নগরীতে চলাচল করা গাড়ি থেকেই সবচেয়ে বেশি চাঁদা তোলা হয়। এ ছাড়া বেশিরভাগ
গাড়ির কাগজপত্র ঠিক থাকে না। এমনকি অনেক চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স পর্যন্ত
নেই। কারো কারো আবার লাইন্সেসের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। এ অবস্থায়
মামলার ভয়ে বেশির ভাগ চালকই ট্রাফিক পুলিশকে চাঁদা দিচ্ছেন।
অলংকার
মোড়ে সাদা পোশাকে থাকা চাঁদা আদায়কারী ব্যক্তির নাম জসিম। তিনি বলেন,
‘দিনের বেলায় নগরীতে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ঢোকার নিয়ম নেই। এতে ট্রাকের
মালিক-চালকদের ক্ষতি হয়। তারা যেহেতু দিনে ট্রাক চালাচ্ছে, তাই খুশি হয়ে
কিছু টাকা দেন ট্রাফিক সার্জেন্টদের। গাড়ির চালকদের কাছ থেকে সেই টাকা
সংগ্রহ করে আমরা সার্জেন্টের হাতে তুলে দেই।’
ট্রাক থেকে চাঁদা তুলে
সার্জেন্টকে দেওয়ার মাধ্যমে আপনার লাভ কী? এ প্রশ্ন শুনে বিব্রত হন জসিম।
তিনি বলেন, ‘এতে আমাদের তেমন একটা লাভ নেই। প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা তুলে
দিই ট্রাফিক পুলিশ ও সার্জেন্টের হাতে। অথচ আমাকে কোনোদিন দেয় ৫০০,
কোনোদিন ৬০০ টাকা দেয়।’ এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে কোনো কথা বলতে রাজি হননি
ট্রাফিক সার্জেন্ট সাহেদ ইকবাল।
২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মার্চ পর্যন্ত
নগরীর জিইসি মোড়, বারিক বিল্ডিং, সিটি গেট, নয়া বাজার, সিমেন্ট ক্রসিং,
নতুন ব্রিজ এলাকা ঘুরে যানবাহন থেকে চাঁদাবাজির দৃশ্য দেখা গেছে। ট্রাফিক
পুলিশের হয়ে চাঁদা তোলা সাদা পোশাকের মানুষদের ‘টেন্ডল’ নামে চেনেন চালকরা।
আবদুল আজিজ নামের একজন ট্রাকচালকের মতে, যারা পুলিশের পক্ষে টাকা তোলে
তারাই টেন্ডল।
অনুসন্ধানে নেমে এ ধরনের বেশ কয়েকজন টেন্ডলের নাম
পাওয়া গেছে। তারা বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের পাশাপাশি
অবস্থান নিয়ে সক্রিয় থাকেন। এর মধ্যে রয়েছেন- ২ নম্বর গেটে রহিম ও কামাল,
অলংকার মোড়ে জসিম ও আমির, সিটি গেটে আনোয়ার, নয়া বাজারে সোহেল, সিমেন্ট
ক্রসিংয়ে আফসার ও আকতার, বারিক বিল্ডিংয়ে শাহেদ ও সাহাবুদ্দিন, নতুন ব্রিজে
রফিক ও হৃদয়, চাক্তাই চামড়ার গুদাম এলাকায় সুমন ওরফে লম্বা সুমন, সল্টগোলা
ক্রসিংয়ে জহির ও জাবেদ, জিইসি মোড়ে দুলাল ও পুলিশের ভাগিনা নামে পরিচিত এক
যুবক।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীতে বন্দর ও উত্তর জোন দুই ভাগে
বিভক্ত হয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট
নির্দিষ্ট একটি স্পটে এক সপ্তাহ দায়িত্ব পালন করেন। সপ্তাহের প্রতি রোববার
নতুন স্পটে দায়িত্ব পান ট্রাফিক সার্জেন্টরা। এর ফলে কোনো কোনো টেন্ডলও
নতুন নতুন জায়গায় চাঁদা তোলার জন্য চলে যান। অভিযোগ রয়েছে, ঘুরেফিরে ২০-২৫
জন ব্যক্তিকে ভাড়া করে ট্রাফিক পুলিশের কিছু সার্জেন্ট চাঁদা আদায় করছে।
উত্তর জোনের ট্রাফিক সার্জেন্ট জামাল হোসেন মীর যেখানেই যান তার সাথে আমির ও
কামাল নামের দুজন টেন্ডল চাঁদা আদায় করেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অর্থ, প্রশাসন ও ট্রাফিক) এ কে এম
শহিদুর রহমান বলেন ক্রাইম ডায়রিকে বলেন, ‘দালাল নিয়োগ দিয়ে ট্রাফিক
পুলিশের চাঁদাবাজির অভিযোগ যদি প্রমাণিত হয়, আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’
শিক্ষিত পুলিশের নিয়োগ দেয়া এসব অশিক্ষিত রিক্সাচালক কিংবা ঐ শ্রেনীর
মানুষেরা এখন নিজেকে পুলিশ ভেবে জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে। আর অপরাধ যদি হয়েই
থাকে তবে টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া কেন??এমন প্রশ্ন এখন সুধীমহলে। টাকার
বিনিময়ে যদি মুক্তি মিলে বিনা বিচারে তবে অপরাধ কমার কোন সম্ভবনাই থাকেনা
বলে মনে করেন অপরাধ বিশ্লেষকেরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ক্রাইম ডায়রি
পরিবারের নির্বাহী পরিচালক ও ক্রাইম ডায়রির বার্তা প্রধান, বিশিষ্ট
অপরাধবিশেষজ্ঞ জনাব আতিকুল্লাহ আরেফিন রাসেল ক্রাইম ডায়রি এ প্রতিবেদককে
বলেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রন করতে হলে অপরাধী দের ন্যুনতমসাজার বিকল্প নেই।
পুলিশের কাজে আরও গতি পেত যদি পুলিশ বাহিনী ছোট খাট অপরাধের জন্য নির্ধারিত
সাজার ব্যবস্থা চালু রাখতেন। তাতে বড় অপরাধ সংগঠিত হবার মাত্রা কমে যেত
বলে তিনি মনে করেন।।।
www.criemdiarybd.com....শেয়ার করুন ,,লাইক দিন..ক্রাইম ডায়রি পরিবারের সাথে থাকুন।।